ভয়েস বাংলা ডেস্ক
প্রার্থীদের আয়কর বিবরণীর তথ্য প্রকাশ না করে এবং অসম্পূর্ণ হলফনামা প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের বঞ্চিত করছে। জনগণের স্বার্থে না কার স্বার্থে কমিশন কাজ করছে—এমন প্রশ্ন তুলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হবে। এ নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনে ১৮৯ জন প্রার্থী। সুজন জানায়, ইসির ওয়েবসাইটে ৩ প্রার্থীর তথ্য না পাওয়ায় ১৮৬ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে।
সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার প্রার্থীদের তথ্য তুলে ধরেন। প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশ্লেষণ করে সুজন বলছে, এবার উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের প্রাধান্য বেশি। ১২ শতাংশ প্রার্থীর আয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সুজন বলেছে, প্রার্থীরা সম্পদের যে তথ্য দিয়েছেন, তা প্রকৃত চিত্র নয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হলফনামায় যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিস্তারিত নয়। হলফনামার যে ছক, তা সঠিক নয়। এতে পরিবর্তন আনতে হবে। হলফনামাগুলো অত্যন্ত দুর্বল। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো এগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখা। তথ্য গোপন করলে মনোনয়ন বাতিল করা। এই নির্বাচনে অনেক প্রার্থীই অনেক তথ্য দেননি। এগুলো অসম্পূর্ণ। এতে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার কথা।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে প্রার্থীদের আয়করের বিবরণী দেওয়া হয় না বলে জানায় সুজন। এই বিবরণীর জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হলেও তারা দেবে না বলে জানিয়েছে সুজনকে।
এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ তথ্যগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণ যেন জেনেবুঝে ভোট দিতে পারে। সব তথ্য না দিয়ে কমিশন অবশ্যই ভোটারদের বঞ্চিত করছে। এ তথ্যগুলো প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।
বদিউল আলম আরও বলেন, অনেকে করের প্রত্যয়নপত্র দিয়েও পার পেয়ে গেছেন। কিন্তু এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন হয় এদিকে নজরই দিচ্ছে না কিংবা দায়সারা গোছের কাজ করছে। মানুষকে তথ্য জানানো তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কমিশন কার স্বার্থে কাজ করে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমান আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়—সিইসি নূরুল হুদার এমন বক্তব্যের জবাবে সুজন সম্পাদক বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সিইসির বক্তব্য বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, একজন প্রার্থী নিজের নেতা–কর্মীদের হয়রানি, গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ইসির ভূমিকা নেই। ইসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার মাধ্যমে এর আগে খুলনা, গাজীপুরে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন দেখা গেছে।
ভোট গ্রহণে ইভিএম এখানে দুর্বল পদ্ধতি উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা দিয়ে ফলাফল যেকোনো দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেহেতু এটা কমিশনের হাতে আছে, তাই তারাও ফলাফল পাল্টে দিতে পারে।
নারায়ণগঞ্জে অতীতের সিটি করপোরেশন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এবারের নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সুজন সম্পাদক।
সভাপতির বক্তব্যে সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘সঠিকভাবে তথ্য দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নজর দেওয়া প্রয়োজন। আশা করি, এ শেষ দায়িত্ব কমিশন ভালোভাবে পালন করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুজনের নির্বাহী সদস্য শাহনাজ হুদা এবং নারায়ণগঞ্জ সুজনের সম্পাদক ধীমান সাহা।
সূত্র: প্রথম আলো