ভয়েস বাংলা ডেস্ক
অনৈক্য ও শৃঙ্খলাহীনতায় অসন্তুষ্ট সোনিয়া গান্ধী কড়া ভাষায় নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, দলকে ভালোবাসলে ও দলীয় আদর্শকে গুরুত্ব দিলে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়ে কাজ করে যেতে হবে। সেই কাজ হলো বিজেপি ও সংঘ পরিবারের ‘শয়তানি’ প্রচারের মোকাবিলা করে কংগ্রেসের আদর্শ তুলে ধরা। শাসকের ‘অনর্গল মিথ্যা’ প্রচারের বদলে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা। মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাংগঠনিক আধিকারিকদের এক বৈঠকে সোনিয়া এই মন্তব্য করেন।
সভাপতি পদসহ দলের সর্বস্তরে সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবির মুখে কিছুদিন আগেই সোনিয়া জানিয়েছিলেন, দলের সভানেত্রী এখনো তিনিই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব অব্যাহত। ভোটের আগে পাঞ্জাবে অন্তর্দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। কিন্তু তারপরও সেখানে দলীয় শৃঙ্খলা ফেরেনি। ছত্তিশগড়েও চলছে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের বিরোধিতা। সেখানে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ত্রিভুবনেশ্বর শরণ সিংদেও বিক্ষোভের মূল নেতা।
অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে আসাম, ত্রিপুরা, গোয়া, এমনকি উত্তর প্রদেশেও নিয়মিত দলত্যাগ অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে বিরক্ত সোনিয়া গতকালের বৈঠকে কড়া ভাষায় অনৈক্য ও শৃঙ্খলাহীনতা বন্ধে সরব হন। তিনি বলেন, একদিকে দলীয় কোন্দল, অন্যদিকে শীর্ষ স্তরে গৃহীত সিদ্ধান্ত স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের গাফিলতিতে সরাসরি তৃণমূল স্তরে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে এক অদ্ভুত যোগাযোগহীনতা। অবিলম্বে এই ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে।
দলের হাল কতটা খারাপ, তা সোনিয়ার ক্ষোভ, উষ্মা ও নির্দেশ থেকেই পরিষ্কার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে তিনি সাংগঠনিক নেতাদের বলেন, একতা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ না হলে দল এগোতে পারবে না। এই দিকে লক্ষ রেখে প্রত্যেককে সংগঠন শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হতে হবে। ত্যাগ করতে হবে যাবতীয় ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা। সাংগঠনিক ও সমষ্টিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সোনিয়া বলেন, লড়াইটা আদর্শের। একদিকে কংগ্রেসের শতবর্ষের আদর্শ, অন্যদিকে বর্তমান শাসক বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের শয়তানি অপপ্রচার। তাদের নিরন্তর ‘মিথ্যা’ প্রচারের মোকাবিলা আদর্শগতভাবে করতে হবে। এই লড়াইয়ে জিততে হলে দৃঢ় প্রত্যয়ে তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। এই প্রসঙ্গে সোনিয়া দলের গৃহীত সিদ্ধান্তের নিচু স্তরে না পৌঁছানোর কথা বলেন। ক্ষোভ চেপে না রেখে তিনি বলেন, অনৈক্য ও শৃঙ্খলাহীনতার কারণে শীর্ষ স্তরে গৃহীত নীতিগত সিদ্ধান্ত তৃণমূল স্তরে পৌঁছাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে দল বিভিন্ন বিষয়ে বিবৃতি জারি করছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জেলা ও ব্লক স্তরের নেতা-কর্মী অন্ধকারে থাকছেন। তাঁদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে।
আগামী বছরের গোড়ায় পাঁচ রাজ্য বিধানসভার ভোট। তার আগে ছন্নছাড়া ভাব কাটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই সোনিয়ার এই বৈঠকের লক্ষ্য বলে শীর্ষ নেতারা মনে করছেন।
সূত্র: প্রথম আলো