পথহারা পথিকের কথা
করোনার বিস্তার রোধে জারি করা কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বর্তমান কঠোর বিধি-নিষেধ কার্যকর থাকবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। পরের দিন অর্থাৎ ১৫ জুলাই থেকে বিধি নিষেধ শিথিল হবে, এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে সব ধরনের গণপরিবহন। খোলা থাকবে মার্কেট, শপিং মল। এরপর ২৩ জুলাই সকাল থেকে ফের কার্যকর হবে কঠোর বিধি-নিষেধ। এ সময়ে আর সবকিছুর পাশাপাশি বন্ধ থাকবে শিল্প-কারখানাও।
করোনা রোধে মানুষ থেকে মানুষের দূরে থাকাটাকেই সর্বোত্তম মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর মানুষকে মানুষ থেকে দূরে রাখতে অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে লকডাউনকে কার্যকর কৌশল মনে করা হয়।
করোনা সারা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, মানুষের জীবন বিপন্ন। করোনার মধ্যে তিনটি ঈদ হয়েছে, আরো একটি ঈদ সমাগত। রোজার ঈদের সময় দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছিল, খোলা ছিল মার্কেট, শপিং মল। এবারের ঈদে অবশ্য সব ধরনের গণপরবিহন চালু থাকবে।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানেই হচ্ছে অর্ধেক যাত্রী বহন করা। অতীতে দেখা গেছে ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী বহন করার বিষয়টি বেশ সফলভাবেই কার্যকর করা সম্ভব। কিন্তু বাস বা লঞ্চে তা সম্ভব হয়নি। এবার পরিস্থিতি কি হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে শংকা তৈরি হয়েছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় এবার ঘরমুখো মানুষের সারি অনেক লম্বা হতে পারে। তাই মানুষের বাড়িযাত্রার আয়োজনকে যতদূর সম্ভব নির্ঝঞ্জাট ও নিরাপদ রাখার বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। এজন্য অন্তত:পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আগামী একত সপ্তাহে কারা বাড়ি যেতে ইচ্ছুক তা অনলাইনে নিবন্ধন করা যেতে পারে। বাস ও লঞ্চ কোম্পানিগুলো যদি অনলাইনে যাত্রীদের আসন নিশ্চিত করে তাহলে টিকিট নিয়ে হই হট্টগোল ও মানুষের ভীড়ভাট্টা পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। অনলাইনের পাশাপাশি মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমেও টিকিটের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এমন একটি স্থাপনা যেখানে চাইলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব। শুধু এসএমএস পাওয়া যাত্রীরা তাদের যাত্রার জন্য নির্ধারিত সময়ের ২ ঘন্টা আগে সদরঘাটে আসবেন এটা করা গেলে টিকিটবিহীন একজন মানুষও পন্টুন এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। বাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি অপেক্ষাকৃৎ কঠিন, তবে সংশ্লিষ্ট বাস কোম্পানিগুলো চাইলে এ ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়। এসএমএস পাওয়া যাত্রীরা বাস ছাড়ার আধা ঘন্টা আগে টার্মিনালে হাজির হবেন। প্রতিটি গাড়ি আর লঞ্চ ছাড়তে হবে সময় মেনে। লঞ্চ ছাড়ার ক্ষেত্রে শুধু সন্ধ্যার পর না ছেড়ে বিকেল তিনটা থেকে পর্যায়ক্রমে লঞ্চ ছাড়া হলে মানুষ সদরঘাটে গিয়ে বসে থাকবে না। যারা টিকিট পাবে তাদের যাওয়ার দিন ও সময় দু’দিন আগে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া যেতে পারে। সদরঘাটের পন্টুনে ঢোকার ক্ষেত্রে জেলা অনুযায়ী প্রবেশ পথ এবং সে অনুযায়ী লঞ্চগুলো ঘাটে রাখা গেলে মানুষকে ভেতরে ঢুকে হয়রানি বা পেরেশানির মধ্যে পরতে হবে না।
যার যেমন খুশি বাড়ি যাওয়াটাই হচ্ছে সবচে’ বড় চ্যালেঞ্জ। এর চাপটা বেশিই পড়ে ফেরি ঘাটে। সেখানে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন, তবে যদি ফেরিঘাটের আধা কিলোমিটারের মধ্যে যাত্রীবাহী ( কাটা লাইনের গাড়ি) না যায় তাহলে ঘাটের পরিস্থিতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
ফেরি চলাচলেও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে, ফেরিঘাটে যাওয়ার জন্য ছোটগাড়ির জন্য একটি এলাকা আর বড় গাড়ির জন্য আরেকটি এলাকা নির্ধারণ করে দেয়া। কোন মানুষ যাতে হুটহাট ফেরিতে না ওঠে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দক্ষতা দেখাতে হবে। উপযুক্ত সংখ্যক সদস্য ঘাটে মোতায়েন করতে হবে। যেখানে ৫শ’ সদস্য দরকার সেখানে ৫০ জন দিয়ে তো পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। ঘাটে ঢোকার অন্তত:পক্ষে ২শ’ মিটার এলাকার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর থাকতে হবে। মোদ্দাকথা শৃঙ্খলা, একমাত্র শৃঙ্খলাবোধ এবং তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ মানুষের যাতায়াতকে অনেকটা নিরুপদ্রব করতে পারে। আর নিরুপদ্রব যাত্রাটি এবার শুধু স্বস্তিকর ঘরে ফেরার জন্যই নয়, জীবনের জন্যও নিশ্চিত করতে হবে।