ভয়েস বাংলা ডেস্ক
লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ভোট গণনাও শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করতে পারেনি দেশটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে সৃষ্ট সংকটের নানা দিক এক বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিবিসি অনলাইন।
পেরুতে ৬ জুন দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিভাজন সৃষ্টিকারী এ নির্বাচনে ভোটারদের দুজন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে বলা হয়।
দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থীর একজন পেদ্রো কাস্তিলিও। অপরজন কেইকো ফুজিমোরি। তাঁরা পুরোপুরি দুই ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতিক। কাস্তিলিও বামপন্থী। কেইকো ডানপন্থী।
নির্বাচনের পর ভোট গণনা শেষ করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু ভোট গণনার পর এখন পর্যন্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে কাউকেই জয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি।
কে কত ভোট পেলেন
পেরুর ন্যাশনাল অফিস অব ইলেকটোরাল প্রসেসেস (ওএনপিই) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা করে। পেরুতে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানের। ১৫ জুন ভোট গণনা শেষ হয় বলে জানায় ওএনপিই।
গণনাকৃত ভোটের হিসাবে দেখা যায়, কাস্তিলিও পেয়েছেন ৫০ দশমিক ১২৫ শতাংশ ভোট। তাঁর প্রতিপক্ষে কেইকো পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ ভোট।
অর্থাৎ কেইকোর চেয়ে কাস্তিলিও মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন, যা ৪৪ হাজার ৫৮ ভোটের সমান।
জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা কেন নয়
নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকলেও জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার এখতিয়ার নেই ওএনপিইর। পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাধীন সংস্থা হলো ন্যাশনাল ইলেকশনস জুরি (জেএনই)।
জেএনই বলেছে, যেসব ভোট নিয়ে অভিযোগ এসেছে, তার সব কটি পর্যালোচনার আগে তারা কোনো প্রার্থীকেই জয়ী ঘোষণা করবে না। একই সঙ্গে তারা ভোট বাতিলের আবেদন নাকচ করেছে।
জেএনইর প্রেসিডেন্ট জর্জ লুইস সালাস এরিনার ভাষ্য, নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তাঁর সংস্থা কাজ করছে। ভোট পর্যালোচনা শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত পেরুর জনগণকে শান্ত থেকে অপেক্ষা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভোট পর্যালোচনা কেন
কেইকো ও কাস্তিলিও উভয় প্রার্থীর দলই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। এই অভিযোগে উভয় দল বেশ কিছু ভোট পর্যালোচনার আবেদন জানিয়েছে। অধিকাংশ অভিযোগই এসেছে কেইকোর পপুলার ফোর্স পার্টি থেকে।
কেইকোর অভিযোগ, নির্বাচনে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। তিনি গত সপ্তাহে দেশটির নির্বাচনী কর্তৃপক্ষকে প্রায় দুই লাখ ভোট বাতিল করতে বলেন। তবে কেইকো তাঁর অভিযোগের পক্ষে খুব কমই বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ দিতে পেরেছেন।
পেরুর কিছু গ্রামীণ এলাকায় কেইকো ভোট পাননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, এমনটা হতেই পারে না। তাঁর ভাষ্য, এসব এলাকায় কাস্তিলিওর ফ্রি পেরু পার্টি ভোট চুরি করেছে। তবে কাস্তিলিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কাস্তিলিওর সমর্থকদের ভাষ্য, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় তাঁর (কাস্তিলিও) জনসমর্থনের শক্ত ঘাঁটি আছে। তাই গ্রামীণ এলাকায় কাস্তিলিওর প্রতিপক্ষ কেইকোর ভোট না পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) পেরুর এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল। ওএএসের পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, নির্বাচনে গুরুতর অনিয়মের কোনো প্রমাণ তাঁরা পাননি।
এরপর কী হবে
ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর কাস্তিলিও দেখতে পান যে তিনি এগিয়ে আছেন। তারপরই তিনি তাঁর টুইটার প্রোফাইলে পরিচয়সংক্রান্ত বিবরণ পরিবর্তন করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত’।
কাস্তিলিও টুইটারে লিখেছেন, একটি নতুন সময় শুরু হয়েছে। পেরুর লাখো মানুষ তাঁদের মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
কাস্তিলিও নিজেকে জয়ী দাবি করলেও তাঁর প্রতিপক্ষ কেইকো পরাজয় স্বীকার করেননি। বরং কেইকো তাঁর সমর্থকদের বলেছেন, তিনি পেরুর গণতন্ত্রকে রক্ষায় লড়বেন।
যেসব ভোটের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তার সব কটি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছে জেএনই। এ নিয়ে জেএনইর শুনানি শুরু হয়েছে। এ শুনানি শেষ হতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলো