এবার একটু আগেভাগেই মন্ট্রিয়েলের শীত চলে গেল। আবহাওয়া এখন উষ্ণ। দিনেরবেলা ঝকমকে আকাশ, রৌদ্রজ্বল।তাপমাত্রা প্লাসের ঘরে। সহনীয় শীতল হাওয়ায় সামারের আমেজ বিরাজ করছে। করোনার মহামারিরকালে কঠিন লকডাউন চলছে। একই সাথে সন্ধ্যাকালীন কারফিউ। তারপরও মানুষ ঘরে বসে নেই। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে রৌদ্রস্নানে বের হয়ে পড়ছে। পথঘাট, পার্ক, মেট্রোস্টেশনে মানুষের আনাগোনা বহুলাংশে বেড়েছে। দীর্ঘদিন পর পত্রপল্লব শুন্য বৃক্ষরাজিতে একটু একটু করে সবুজের ছোঁয়ায় চারিদিক যেন নবপ্রানে জেগে উঠেছে । প্রকৃতির এরূপ দেখে রবি ঠাকুরের গানটি মনে পড়ে যায়। আহা আজি বসন্তে কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়..
হ্যাঁ এখানে এখন গ্রীস্মের ছোঁয়া লেগেছে।বসন্ত আজ জাগ্রত দ্বারে।
সাধারণত অক্টোবর হতে এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র ঠান্ডা ও শীতের সময়। মে মাসের প্রথম সাপ্তাহ হতে আবহাওয়া ধীরে ধীরে উষ্ণতর হতে থাকে। বলা যায় মে মাসের শেষার্ধ হতে সামারের শুরু।

এখানে সাত থেকে আটমাস প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডা পড়ে। তাপমাত্রা মাইনাস চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের ঘরে ওঠানামা করে। দিন রাত অবিরাম তুষারপাতে জনজীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়ে। হাঁড় কাঁপিয়ে দেয়া শীতের তীব্র ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য জোব্বাজুব্বি পরে হাঁটু সমান তুষার ডিঙ্গিয়ে প্রাত্যহিক জীবন যাপন আমার মতন অনভ্যস্তের পক্ষে ভীষন কঠিনই হতো। তাই এই আটমাস চাতক পাখির মতন অপেক্ষায় থাকতাম একটু ঝকঝকে আকাশ, এক ফালি কড়া রোদ আর তাপমাত্রা প্লাসের জন্য। অবশেষে সেই অপেক্ষার পালা একটু আগেভাগে শেষ হওয়ায় ভীষন ভীষন আনন্দিত।
অনাবাসীর প্রাত্যহিক জীবন যাপনের কড়চায় অনেক কিছুই ইতোপূর্বে লিখেছি। এ পর্বে লিখছি সাইকেলের শহর মন্ট্রিয়েল নিয়ে। সাইকেলের শহর বলতে আমাদের মানসলোকে ভেসে ওঠে আমাস্টারডামের কথা। সেই শহরের মতন মন্ট্রিয়েল সাইকেল বান্ধব শহর। সারা শহরজুড়ে মেট্রো, বাসস্টেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন পার্ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বাইসাইকেল স্ট্যান্ড রয়েছে। যে কেউ এখান হতে সাইকেল নিয়ে শহর প্রদক্ষিন বা তার প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্যই কিছু নিয়মবলী রয়েছে, যা ব্যবহারকারীকে মেনে সাইকেল ভাড়া নিতে হয়। প্রধান সড়কে সাইকেল চালানোর জন্য নির্দিষ্ট লেন করা আছে। কোন কোন স্থানে ফুটপাতের পাশে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন আছে।

মন্ট্রিয়েল একটি সাইকেল-বন্ধুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে পরিচিত। আপনি যদি একটি সাইকেল ভাড়া নেয়ার পরিকল্পনা করেন, তার আগে অনলাইনে নির্দিষ্ট এপসে সাইন আপ করতে হবে। ঘন্টা বা সারাদিনের জন্য নির্ধারিত ভাড়া অনলাইনে পে করে নিতে পারবেন।
মন্ট্রিয়েল বসবাসকারী ছাড়াও ভ্রমণকারীরা শহর প্রদক্ষিনের জন্য বাই সাইকেল পছন্দ করেন।এখানে সাইকেল চালানো খুবই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে জনপ্রিয়।
যারা ভ্রমনে আসবেন কিংবা এখানে নতুন অধিবাসী ও পড়তে আসা শিক্ষার্থী তাদের জেনে নেয়া উচিত কিভাবে বাইসাইকেল ভাড়া নেয়া যায়। সাইকেল ভাড়া দেয়ার জন্য বিকশায়ার নামে প্রোগ্রামটি মুলতঃ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করে।
জেনে নিন বিকশায়ার প্রোগ্রাম হতে কিভাবে সাইকেল ভাড়া নিবেন।
প্রথমে এন্ড্রয়েড মোবাইলের অনলাইন এপসে সাইন আপ করতে হবে। অথবা সাইকেল স্ট্যান্ডে বিকশায়ারের কিয়স্কে। এ জন্য একটি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড প্রয়োজন হবে। আপনি ২৪ ঘন্টা,৩০ দিনের এবং ৩৬৫ দিনের জন্য সাইন আপ করতে পারবেন। খুবই সহজ একটি পদ্ধতি।
যদি কেউ ২৪ ঘন্টার জন্য ভাড়া নিতে চান, সাইন আপের পর তিনি একটি আনলকিং কোড পাবেন। ৩০ দিনের এবং বছরব্যাপী ভাড়া নেয়ার জন্য ওরা গ্রাহকের মেইলে একটি কী ( চাবি) পাঠিয়ে দেয়।

সাইকেল নেয়ার সময় আনলকিং কোডটি প্রবেশ করান বা আপনার কী-টি ব্যবহার করুন এবং স্ট্যান্ড হতে একটি সাইকেল টেনে বের করুন। যে কোন ট্রিপ প্রথম ৩০ মিনিট বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
ঘরে বসে সাইন আপের পর আপনি যে কোন স্থান হতে যে কোন সময় সাইকেল সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে যে কোন নিকটবর্তী সাইকেল স্ট্যান্ডে সাইকেল ফেরত দিতে পারবেন। মনে রাখা প্রয়োজন, যদি দেখেন সাইকেল স্ট্যান্ড বা ডক পূর্ণ হয়ে আছে তখন আশেপাশে ডকে সাইকেল জমা দিতে পারবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, এপসটির লিংক কোথায় পাবেন। খুবই সহজ হচ্ছে গুগলে মন্ট্রিয়েল বাইসাইকেল ভাড়া কিংবা এপস লিখে সার্চ দিলে লিংক পেয়ে যাবেন।
সামারে বাই সাইকেলে মন্ট্রিয়েল ভ্রমন খুবই আনন্দময় ও উত্তেজনাকর। সারা শহর ঘুরে দেখা, জানার জন্য আমার প্রথম পছন্দ সাইকেল। পথঘাট চেনার জন্য জিপিএস ব্যবহার না করে হারিয়ে যাবার আনন্দটা সাইকেল ছাড়া অন্যকোন বাহনে পাওয়াই যাবে না। সাইকেলের প্যাডেলে পা দিয়ে গুন গুন করে গেয়ে উঠুন, আজ আমার হারিয়ে যাবার নেই কোন মানা…
১৬.০৪.২০২১
মন্ট্রিয়েল