শরিফুল হাসান
গত ২৪ ঘন্টা ধরে আমি কিছু লিখতে পারছি না, পড়তে পারছি না। কার্টুনিষ্ট কিশোরের নির্যাতনের বর্ণনাটা একবার পড়ুন প্লিজ। আপনারা যারা এই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক, আপনারা যারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেন, আপনারা যারা এই রাষ্ট্রের প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা কিংবা বিচারের সঙ্গে জড়িত, এই রাষ্ট্রের যারা বিবেকবান, প্রত্যেককে বলবো, একবার পড়ুন। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে কী এমন বাংলাদেশই আমরা চেয়েছিলাম!
দেখেন কার্টুনিষ্ট কিশোর কোন খুনী নন, ব্যাংক ডাকাত নন, লুটপাট করেননি, চুরি করেননি বরং সারাজীবন সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আচ্ছা কী অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আপনারা কেউ বলবেন কী? কী অপরাধে এমন অত্যাচার?
আপনারা প্লিজ কিশোরের বর্ণনাগুলো শুনুন। একবার অন্তত পড়ুন। দেখবেন গা শিউরে উঠবে। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি ক্ষমতাবান। আপনি নিরাপদ। কিন্তু বিশ্বাস করুন এভাবে যদি দেশ চলে এটাই যদি হয় সংস্কৃতি তাহলে আপনি আমি যে কেউ এর শিকার হতে পারি।
একজন মানুষকে গ্রেপ্তারের বর্ণনা পড়ুন। ১৬-১৭ লোক আসছে, ইয়াবা অস্ত্র-রাখছে, পুরো বাসা লন্ডভন্ড করছে, মুখ থেকে ঘাড় পর্যন্ত টুপি পরিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ যেন চিৎকার শুনতে না পায় সে কারণে গাড়িতে তীব্র শব্দে গান বাজাচ্ছে, তুই তোকারি করছে!
কিশোর বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের একটা অংশজুড়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই ব্যবসায়ীকে কীভাবে চেনেন, কেন ওই ব্যক্তির কার্টুন এঁকেছেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। আচ্ছা একবার ভাবেন তো কতোটা অদ্ভুত দেশ! এখানে ব্যাংক লুট দোষের না, হাজার কোটি টাকা লুটলেও শাস্তি হয় না, হাজার কোটি টাকা পাচার করেও সসম্মানে পালিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু তাদের কার্টুন আঁকলে দোষের।
অত্যাচারের বর্ণনা শুনবেন? স্যাতসেতে একটি কক্ষে রাখা হচ্ছে, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রচণ্ড জোরে কানে থাপ্পড় দেওয়া হচ্ছে, কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটানো হচ্ছে! আরও শুনবেন? কিশোর বলছেন, মুশতাকের গা থেকে প্রস্রাবের প্রকট দুর্গন্ধ আসছিল। তাকেও কয়েকদিন আগে তুলে আনা হয়েছিল। অনেক পেটানো হয়েছে, যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে। মেঝেতে অনেকগুলো খবরের কাগজ পড়েছিল। সেগুলো দিয়ে তাকে শরীর পরিষ্কার করতে বললাম। সে তার আন্ডারওয়ার খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। দেখলাম সেটার মধ্যে মল-মূত্র লেগে আছে। জানাল যে, নির্যাতনের সময় প্যান্টেই মল ত্যাগ করে ফেলেছে।
বিশ্বাস করেন এই কথাগুলো পড়ার পর গতকাল থেকে আমি আর কিছু পড়তে পারছি না। লিখতে পারছি না। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে এমন বাংলাদেশই কী আমরা চেয়েছিলাম? আমি জানি না আমাকে কে উত্তর দেবে?
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি ক্ষমতাবান। আপনি নিরাপদ। হয়তো ভাবছেন আপনি তো কিছু লিখছেন না, আঁকছেন না। কিন্তু বিশ্বাস করুন এভাবে যদি দেশ চলে, এটাই যদি হয় সংস্কৃতি তাহলে আপনি আমি যে কেউ এর শিকার হতে পারি। আর সেটা ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠছে। তবে কী লেখালেখি পুরোপুরি বন্ধ করে দেব? আচ্ছা দেশকে ভালোবাসা কী খুব অপরাধ? একটা সুন্দর দেশ চাওয়া খুব অপরাধ? আমি জানি না আমাকে কে উত্তর দেবে?
ফেসবুক স্ট্যাটাস