মোস্তফা ফিরোজ
ক্ষমতায় থেকে ট্রাম্প নানা রকমের হুঙ্কার দিচ্ছেন। আইনের হুমকি। কারচুপির অভিযোগ। কিন্তু বিচার বিভাগ নির্বিকার। ভোট গণনাকারীরা নিশ্চিন্তে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। আর গণমাধ্যম? তারাতো রীতিমতো ছড়ি ঘোরাচ্ছে। সিবিসি,এনবিসি সহ আরো কয়েকটি চ্যানেল ট্রাম্পের ভাষণ পর্যন্ত মাঝপথে বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চায় না, কোনভাবেই নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হোক। মানুষ বিভ্রান্ত হোক। সিএনএন প্রচার করলেও সাথে সাথে উপস্থাপক দ্বিমত পোষণ করেছেন ট্রাম্পের বক্তব্যের সাথে। অন্য চ্যানেলের উপস্থাপকদের ভূমিকাও ছিলো একই। তারা বলেছেন, ট্রাম্পের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোন প্রমাণ নেই।
যতো সমালোচনাই করা হোক না কেন, আমেরিকার বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও গণমাধ্যম কতোটা যে স্বাধীন এবং দায়িত্বশীল এই নির্বাচনে সেটাই প্রমাণিত হলো। নির্বাচনের দিন থেকে ঠান্ডা মাথায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রাম্প ভোট গণনাকালে টুইটে ও টিভিতে এসে নানা কথাবার্তায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। তার সমর্থক রিপাবলিকানরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
কোন দেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই তা মাপার একটি ব্যারোমিটার হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন। আর এটা সম্পন্ন হতে পারে তখনই যখন স্বাধীন বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যম, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব থাকে। পাশাপাশি প্রয়োজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। তাহলেই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের মুখে থাকা ট্রাম্প ও তার দল রিপাবলিকানরা দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারেনি। কিন্তু আমেরিকার আইন ও বিচার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং গণমাধ্যমের শক্ত ভূমিকার কারণে এখনো পর্যন্ত অবাঞ্ছিত সব পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তারা দেখিয়েছে কিভাবে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হয়।
রিপাবলিকানরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেও বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা ডেমোক্র্যাটরা কিন্তু শান্ত আছে। ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। বাইডেনও খুবই সংযত ভাষায় কথা বলছেন।সবাইকে শান্ত থাকতে বলছেন। এটাকেই বলে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা।
উপসংহারঃ শেষ পর্যন্ত আমেরিকার নির্বাচনটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলে বাইডেন বা ডেমোক্র্যাটদের নয়, জয় হবে আসলে গণতন্ত্রের। আর আমেরিকায় গণতন্ত্র জয়ী হলে এর প্রভাব পড়বে বিশ্ব রাজনীতিতে। বিশ্বের যেসব দেশে গণতন্ত্র ভঙ্গুর বা বিপন্ন হয়ে পড়েছে তারা আমেরিকার এই গণতান্ত্রিক নির্বাচন থেকে হয় শিখবে নতুবা শিখতে বাধ্য হবে। তবে জনগণই শেষ ভরসা। তারা না চাইলে গণতন্ত্র আসবে না।