মোস্তফা ফিরোজ
প্রথম আলো পত্রিকায় তিতাস গ্যাস হরিলুটের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখে হতাবাক হলাম। ঢাকার আশেপাশের চারটি জেলায় দশ লাখ অবৈধ সংযোগ। এই অবৈধ গ্যাসের সংযোগ ফি ও প্রতিমাসে বিল ভাগবাটোয়ারা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। তিতাস কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। তারা এই বিষয়ে প্রশাসনের সাহায্য দরকার এমনটাও কখনো মনে করে না।
কি অবাক কান্ড! তিতাস গ্যাসের এমন হরিলুট মানে হচ্ছে দেশের ক্ষতি। কেননা, এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না। সব চলে যাচ্ছে তিতাসের কিছু লোকজন ও ক্ষমতাবান স্থানীয় লোকদের পকেটে। ঢাকার সাথে সংযুক্ত এই চারটি জেলায় কতোজন এমপি আছেন? কতোজন ডিসি বা এসপি আছেন? তারা কেউই কি রাষ্ট্রীয় অর্থের লুটপাটের প্রতিবাদ করেছেন? সংসদে আওয়াজ তুলেছেন? অথবা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট করেছেন? তারা আছেন কেন? কি কাজ তাদের? চেয়ে চেয়ে তিতাস গ্যাসের হরিলুট দেখা? কারো কি কোন জবাবদিহিতা আছে? অথচ রিপোর্টটি পড়লে গা শিউরে ওঠে। সেই গ্যাস সংযোগ বন্ধ হবার পর সেই ২০১২ সাল থেকে এই কান্ড চলে আসছে।
কেবল, তিতাসের সাধারণ কর্মচারীদের পক্ষে এমনটা করা সম্ভব নয়। নীচ থেকে উপর পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারা আছে। এর ভাগ যায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে। সবাই মিলেমিশে রাষ্ট্রের এমন সর্বনাশ করছে। সাধারণ গ্রাহকরা বৈধ সংযোগ পাচ্ছে না। এর জন্য যখন হাহাকার তখন এই সংকটকে পূঁজি করে দশ লাখ অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। যদি এগুলো বৈধ সংযোগ হতো তাহলে সরকারী কোষাগারে টাকা জমা হতো। কিন্তু এই দীর্ঘ বছর ধরে ব্যক্তি বিশেষদের পকেট ভারী হয়েছে।
নারায়নগজ্ঞে দূর্ঘটনা না হলে এমনটাই চলতে থাকতো। কিন্তু দূর্ঘটনার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় এমন অপচয় ও লুটপাটের ঘটনা প্রকাশ্যে বেরিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত কোন কর্তা ব্যক্তিকে এজন্য বলি হতে হলো না। এটাই হলো এখন যেনো রাষ্ট্রীয় বিধান! শত শত বা হাজার কোটি টাকার অপচয় দূর্নীতি বা লুটপাটের ঘটনা ফাঁস হোক না কেন তার বিরুদ্ধে পাল্টা দৃষ্টান্তমূলক মডেল কোন পানিশমেন্ট নেই। ফলে, অপরাধী চক্র বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত ধারায় ব্যবস্থা নিতে নিতে দেখা গেলো অপরাধী ততক্ষণে পগার পার। এভাবেই কি চলতে থাকবে?