Online Bangla feature and news portal
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

চোর বাটপারের জন্য এত মায়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের?

আপডেট : আগস্ট ১০, ২০২০ ২:৩৫ অপরাহ্ণ

909

মাসুদ কামাল

আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটা দারুন কথা বলেছেন। বলেছেন- এখন থেকে কোন হাসপাতালে আর অভিযান হবে না। এককভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোথাও যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে, তারপর প্রয়োজনে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাবে। হাসপাতালে কোন অভিযান হবে না, ইনকোয়ারি হবে।

আমি নিশ্চিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন কথায় সবচেয়ে বেশি মন খারাপ করেছে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোঃ সাহেদ। তার মন খারাপের কারণ- এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা তিনি মাসখানেক আগে কেন বললেন না? জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি যদি এই কথাটি বলতেন, তাহলে তো তার হাসপাতালে র‌্যাবের কোন অভিযানই পরিচালিত হতো না! বড়জোর একটা ইনকোয়ারি হতো। আহা, কি ভালোই না হতো তাহলে! কারণ ওরকম গোটা কয়েক ইনকোয়ারি রিপোর্ট তো তার পকেটেই থাকে সবসময়। কোন প্রকার পরীক্ষা না করেই তিনি যদি করোনভাইরাসের রিপোর্ট দিতে পারেন, তাহলে তার হাসপাতালের ইনকোয়ারি রিপোর্ট দেওয়া তৈরি করে দেওয়া তো তার জন্য কোন বিষয়ই না।

হাসপাতালে অভিযানের বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আসে গত মাসে, রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে। হাসপাতাল নামধারী এই প্রতিষ্ঠানের ছিল না কোন চিকিৎসা করার কোন সক্ষমতা, ছিল না বৈধ লাইসেন্স, ছিল না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী। তারপরও এই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিল কোভিড-১৯ এর মত প্যানডেমিকের চিকিৎসার দায়িত্ব। যে মন্ত্রী আজ গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন, তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন সেই সেই রিজেন্টের সঙ্গে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে। কাজেই এমন একটা প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর মাননীয় মন্ত্রী যদি মন খারাপ করে থাকেন, সেটাকে নিশ্চয়ই তেমন একটা অস্বাভাবিক বলা যাবে না।

চুক্তিটি যে ঠিক হয়নি, রিজেন্ট হাসপাতালের যে চিকিৎসা করার ন্যূনতম সক্ষমতাই ছিল না, ২০১৬ সালের পরে তারা যে আর তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেনি, তারা যে টেস্ট না করেই করোনা পরীক্ষার মনগড়া রেজাল্ট দিত, এসব কিন্তু সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা মন্ত্রণালয় উদঘাটন করেনি। করেছে, র‌্যাব। সাধারণ মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, র‌্যাব গিয়ে প্রতারকদের ধরেছে। অথচ র‌্যাব যে কাজটি করেছে, সেটি কিন্তু সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত কাজের অংশ ছিল। নিয়ম হচ্ছে- তিন মাস পরপর তারা বেসরকারি ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করবে, দেখবে-চিকিৎসার সক্ষমতা তাদের আছে কিনা। কিন্তু তারা তাদের ওপর অর্পিত সেই দায়িত্বটি পালন করেনি। পালন যে করেনি- সেই বিষয়টিই নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে র‌্যাবের তৎপরতায়।

কেবল রিজেন্টই নয়, র‌্যাব এরপর আরও দুটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে। গুলশানের একটি এবং মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরেরটির মালিক আবার সাবেক এক স্বাস্থ্যমন্ত্রী! এই দুটি হাসপাতালেও দেখা গেছে নানা অনিয়ম। অর্থাৎ, যেখানেই হাত পড়ছে, বের হয়ে আসছে দুর্গন্ধ। র‌্যাব বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন তৎপরতায় সাধারণ মানুষ খুশি। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আমলা কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা কি খুশি? বলা হয়ে থাকে, স্বাস্থ্য বিভাগে নাকি রয়েছে দুর্নীতির সোনার খনি। সেই খনির সুবিধাভোগীরা যে খুশি হবেন না- সেটা বোঝার জন্য বিশেষ জ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়ে না।

আসলেই তারা খুশি হননি। তারা বিব্রত হতে পারতেন, তারপর সেখান থেকে উঠে আসতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তারা বোধকরি বিব্রতও নন, বরং অনেকটাই বিরক্ত। সেই বিরক্তিটাই এবার ‘বাণী’ হিসাবে প্রকাশিত হলো মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে। এরকমটা হবে সেটা বোঝা যাচ্ছিল কয়েকদিন আগে থেকেই। দিন কয়েক আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটা চিঠি ইস্যু করেছিল। সেখানে বলা হয়েছে- এরপর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এধরনের কোন অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকবে। কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে অভিযান চালাতে হলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।

ওই চিঠি আর মন্ত্রীর এই বক্তব্য, এর সরল অর্থ হচ্ছে- সহসাই আর কোন হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, র‌্যব অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টের অধীনে। এ ধরনের একটা চিঠি কিংবা মন্ত্রীর বক্তব্য কি চলমান কোন আইনকে রুদ্ধ করতে পারে? এর উত্তর হচ্ছে- পারে না। এতকিছুর পরও র‌্যাব চাইলে অবশ্য মোবাইল কোর্ট আইনটির প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে পারে। কিন্তু কেন তারা খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে? তাছাড়া ওই চিঠিটির একেবারে শেষ লাইনে বলা হয়েছে-এই বিষয়টা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তাহলে অর্থটা কি দাঁড়ালো? র‌্যাবকে প্রকারন্তরে বলা হলো- তোমাদের মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তিনিও রাজী, তোমাদের নিজে থেকে আর কোন অভিযান করার দরকার নেই।

আচ্ছা, মন্ত্রী এমন একটা কথা কেন বললেন? সে কারণটি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায় গত ৪ আগস্ট ইস্যু হওয়া ওই চিঠিটির দিকে তাকালেই। চিঠির শুরুতেই বলা হয়েছে- ‘এ ধরনের অভিযানের কারণে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।’ আসলে চাপা অসন্তোষটা কাদের মধ্যে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অযোগ্যতা নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়ে গেছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধে? যে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলো নিয়ম নীতি মেনে চলছে- তাদের মধ্যে? নাকি যারা হাসপাতালের নাম করে ডাকাতি আর বাটপারির প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে- তাদের মধ্যে? যদি অসন্তোষ মাপার কোন বাটখারা থাকতো- রিজেন্টের সাহেদের চেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট আর কেউ কি হতে পারতো? তাহলে কি মাত্র এক মাসের মধ্যেই সাহেদ দেখিয়ে দিচ্ছে- কত উপরে পর‌্যন্ত রয়েছে তার লোক?

চুরি ধরে ফেললে চোরের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেবে- এটা অতি স্বাভাবিক বিষয়। তাই বলে কি চোর ডাকাতের মানসিক অবস্থাকে সম্মান জানিয়ে থানা-পুলিশ-আদালত সবাইকে নিস্ক্রিয় করে দিতে হবে?




স্মৃতি ও স্মরণ

ছবি