পথহারা পথিকের কথা
করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমেছে, কমেছে মৃত্যুর সংখ্যাও, তবে এখনো প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ নতুন করে এ রোগে সংক্রমিত হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় শ’এর ঘরেই রয়েছে। করোনা বিদায় নেয়নি, কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনাকেন্দ্রিক আমাদের যে সতর্কতা আর স্বাস্থ্যবিধি তা বিদায় নিয়েছে। রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা হচ্ছে মানুষ যেন পরাধীনতার অর্গল ভেঙে স্বাধীন হয়েছে, ভাবখানা দেখে মনে হয়, করোনার বিরুদ্ধে গত দেড় বছর ধরে চলা যুদ্ধে জয় হয়ে গেছে মানুষের তাই এখন আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই! মাস্ক পড়া লোকের সংখ্যা কমেছে, গাড়িসহ সব ধরণের যানবাহনে মানুষ চলছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, দোকানপাট. মার্কেট, বিনোদন কেন্দ্র সব জায়গায় মানুষের বেপরোয়া চলাচল। আমরা সম্ভবত: ভুলতে বসেছি, করোনা বিদায় নেয়নি, অনেকে বলছেন এটা আসলে বিদায় নেয়ার জন্য আসেনি, করোনাকে সঙ্গী করেই মানুষকে বাঁচতে হবে। বিশ্বব্যাপী এর নাম দেয়া হয়েছে ‘NEO NORMAL’ এর যুতসই বাংলা কোথাও চোখে পড়েনি, আমি একে ‘নতুন জীবনধারা’ হিসেবে উল্লেখ করছি। সেই নতুন জীবনধারা হচ্ছে আমাদের সবকিছুই করতে হবে, সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে হবে, কিন্তু তার মধ্যেও থাকতে হবে সতর্ক ও সংযত। কিন্তু আমরা না সতর্ক, না সংযত।
সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করেছে, সরকারের পক্ষ থেকে এখন তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়ে না, এমনটা হওয়া ঠিক হয়নি, মানুষের মধ্যে যে ঢিলেঢালা বা গাছাড়া ভাব এসেছে তা যদি সরকারকেও পেয়ে বসে তাহলে পরিস্থিতি যদি ফের নাজুক হয় তখন সরকারকে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। তাই ’মাস্ক নাই, সেবা নাই’ বলে যে অবস্থান সরকার নিয়েছিল তা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রনিধিদের মাস্ক পড়ায় কড়াকড়ি এমনকি অঘোষিত আইনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। গণপরিবহনে মানুষের চলাচল হয়তো সীমিত করা যাবে না, কিন্তু মানুষ মাস্ক পড়ছে কি না ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তা দেখতে হবে, জরিমানার যে বিধান তা জারি রাখতে হবে। সরকার হাল ছেড়ে দিলে মানুষের অবহেলার পালে ঢেউ লাগবে।
করোনাকালে গত দেড় বছরে আমাদের জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, দীর্ঘ সময় আমাদের ঘরে থাকতে হয়েছে, অকারণে বাইরে ঘোরাঘুরির প্রবণতা অনেকটা কমেছিল, অনলাইনে কেনাকাটায়ও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অনেকে, হোম অফিসও কিন্তু একেবারে খারাপ কাজ দেয়নি। এর সবকিছু হয়তো পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা সম্ভব না, কিন্তু ঠেকায় পড়ে সরকার যদি ফের লকডাউন দেয় তাহলে আমাদের কিন্তু তা না মেনেও কোন উপায় থাকবে না, তাই কিছু অভ্যাস যদি আমরা ধরে রাখি তা অবশ্যই সুফল দেবে।
এরমধ্যে যেটি মানুষ নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা হচ্ছে অকারণে বা অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের না হওয়া ও ঘোরাঘুরি না করা। পরিবারের সাথে বেশি সময় দেয়ার কিংবা পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটানোর যে অভ্যাসটা আমাদের হয়ে উঠেছে তা থাকুক না। আর সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাস্ক পড়া। মাস্কটা শুধু করোনার জন্য কেন, ধুলাবালি থেকে নিজেদের রক্ষা করতেও খুবই কার্যকর। আসুন সচেতনতায় ছাড় না দেই, সতর্কতায় গাফিলতি না করি, নতুন জীবনধারার সাথে আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হবে আমাদের জীবনের জন্যেই।