ভয়েস বাংলা ডেস্ক
অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচারের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনে র্যাব-৪–এর একজন উপপরিদর্শক (এসআই) গতকাল শুক্রবার রাতে ওই মামলা করেন। এ নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে রাজধানীর গুলশান থানায় দুটি, পল্লবী থানায় একটিসহ তিনটি মামলা হলো।
শনিবার (৩১ জুলাই) সকালে পল্লবী থানার এসআই নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘শুক্রবার রাত ২৩টা ৩০ মিনিটে (সাড়ে ১১টায়) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনের ৩৫, ৫৫ ও ৭৩ ধারায় ওই মামলা করা হয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বৈধ কাগজপত্র ব্যতীত অবৈধভাবে জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার ও অনুষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। মামলার বাদী র্যাব-৪–এর উপপরিদর্শক ইদ্রিস আলী।’
গতকাল শুক্রবার গুলশান থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল রাতে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গতকাল গুলশান থানায় পৃথক দুটি মামলা করে র্যাব। একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং অন্যটি বিশেষ ক্ষমতা আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। প্রায় সোয়া চার ঘণ্টার অভিযানে ওই বাসা থেকে বিদেশি মদ, বিদেশি মুদ্রা, হরিণ ও ক্যাঙারুর চামড়া, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়। রাত সোয়া ১২টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাবের সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। এরপর রাত দুইটার দিকে র্যাবের একটি দল মিরপুরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন জয়যাত্রা টেলিভিশন ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনে অভিযান চালায়। রাতভর ওই অভিযান চলে।
গতকাল বিকেলে কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর স্বীকার করেছেন, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই আইপি টিভি চ্যানেল পরিচালনা করছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনি জেলায় জেলায় প্রতিনিধি নিয়োগের নামে চাঁদাবাজি করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরে অবস্থিত ওই টেলিভিশন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। টিভির সম্প্রচার-সরঞ্জাম জব্দ করেছে বিটিআরসি।
ব্রিফিংয়ে আল মঈন জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ও টেলিযোগাযোগ আইনে পৃথক মামলা হবে।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। গত ১৭ জানুয়ারি তাঁকে এই পদ দেওয়া হয়। গত রোববার তাঁকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীর কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। আবদুল মতিন খসরু মারা গেলে ওই আসনে মনোনয়নের জন্য দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি।
সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। কথিত এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়।
সূত্র: প্রথম আলো