ভয়েস বাংলা ডেস্ক
করোনাকালে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে কোভিড-১৯ এ শনাক্ত হওয়া আর না হওয়ার বিষয়টি। মানুষ কী করলে করোনা শনাক্তের হাত থেকে রেহাই পেতে পারে সে ব্যাপারে দুনিয়া জোড়া গবেষণা চলছে, আর এই গবেষণার একটি বৈশ্বিক ফলাফল হচ্ছে মানুষকে মানুষের সংষ্পর্শ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, আর এটা নিশ্চিত করতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘লকডাউন’ এর মাধ্যমে নাগরিকদের ঘরে আটকে রাখার কৌশল নিয়েছে।
যাইহোক, লকডাউনকালে মানুষের অভ্যাসে অনেক পরিবর্তনের কথা গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের বিষয়টি। অনেকে মনে করছেন অলস সময় তাই তারা হালকা ধূমপানে অভ্যস্ত হচ্ছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে তারা ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন। কিন্তু ধূমপানের ইতিহাস কিন্তু তা বলে না, বরং দেখা গেছে মানুষ ধূমপানে এভাবেই আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেকে চাপ কমানোর জন্য ধূমপান করেন। এতে হার্ট ও ফুসফুস দু’য়েরই ক্ষতি হয়। করোনাভাইরাসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। ধূমপানের ফলে যাদের ফুসফুস আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত থাকে কিংবা দুর্বল থাকে তারা করোনার ধাক্কা সামাল দিতে পারেন না।
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করে, ধূমপান ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, লাং ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতাই যদি ঠিকঠাক না থাকে, তাহলে তা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন হয়ে ওঠে আর তার পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই শরীরে করোনা প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে বা ইমিউনিটি বাড়াতে গেলে ধূমপান বাদ দিতে হবে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের উহান প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার প্রথম দুজন রোগী দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান করতেন এবং যেটা তাদের ফুসফুস দুর্বল করে দিয়েছিল।
বলা হয়, অলস সময়ে নাকি ধূমপানের প্রবণতা বাড়ে। করোনাকালে চলমান লকডাউনের সময় দেশের বেশিরভাগ মানুষ কার্যত: ঘরেই থাকছেন, এ সময়ে ধূমপানের প্রবণতা, তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন আর বিক্রি নিয়ে একটি গবেষণা চালাতে পারে ধূমপানবিরোধী সংস্থাগুলো। তবে আমাদের চারিদিকে তাকালে দেখা যায় তরুণ ও কিশোর শ্রেণি হয়তোবা এই সময়ে ধূমপানের দিকে একটু বেশিই ঝূকে পড়েছে। কেন না, তাদের স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ এখন গতিহীন, সারাদিন অলস সময়, এরইমধ্যে যে যখন পারছে ঘরের বাইরে এসে বন্ধুদের সাথে স্বল্প সময়ের আড্ডা দিচ্ছে, আর তাদের আড্ডার একটি বড় অনুষঙ্গ ধূমপান, কোন কোন ক্ষেত্রে হয়তো মাদকও।
সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা ভয়েস ফর ইন্টারঅ্যাকটিভ চয়েজ এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট-ভয়েস এবং সংবিধান ও আইন বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম-এলআরএফ এর উদ্যোগে ঢাকায় এক কর্মশালা হয়। কর্মশালায় ন্যশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় প্রধান এপিডেমিওলোজি এন্ড রিসার্চ অধ্যাপক ড সোহেল রেজা চৌধুরী, প্রজ্ঞার হেড অফ টোব্যাকো কন্ট্রোল হাসান শাহরিয়ার এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর লীড পলিসি এডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান ধূমপান ও মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ বিশেষ করে তরুণ সমাজ যাতে এতে আকৃষ্ট না সেজন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এর ক্ষতিকর দিকগুলো আরও বেশি করে জনসমক্ষে আনার পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একত্রে কাজ করার পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে ভয়েস এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, দেশের বেশকিছু সংগঠন তামাক ও ধূমপানে তরুণরা যাতে আকৃষ্ট না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে, তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি এখনো ঠিক সেভাবে আসছে না। তার মতে, গণমাধ্যম যদি এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাহলে মানুষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবে, তার মতে, নামকাওয়াস্তে আইন দিয়ে হবে না, ধূমপান বিশেষ করে জনসমক্ষে ধূমপানের যে প্রবণতা রয়েছে তা কাটাতে আইনের কঠোর প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই।