মোহাম্মদ রুবেল
প্রিয় কর্ণেল তাহেরকে কুরবানি দেওয়ায় পর জেনারেল জিয়াউর রহমান এর কাফফারা দিতে ভুল করেননি।তিনি রাস্ট্রপতি পদে গদিনশীল হয়েই তাহের পরিবারের জন্য ঢাকার লালমাটিয়ায় একটা আবাসিক প্লট বরাদ্দ দেন।তাহেরের স্ত্রী ও তাহেরের বড়ভাইয়ের স্ত্রীকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি দেন।তারা জেনারেল জিয়াউর রহমানের এই দয়া দু’হাতে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।তাহেরের বড় ভাই আবু ইউসুফ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হলেও জিয়াউর রহমানের দয়ায় বেশি দিন কারাগারে থাকেননি।তাহেরের ছোটভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জাসদ – গণবাহিনীর ঢাকা নগরের কমান্ডার (কথিত বোমা আনোয়ার) ড.আনোয়ার হোসেনের ১০ বছরের সাজা হয়েছিল। তিনিও সাজা শেষ হওয়ার পূর্বে মুক্তি পেয়েছিলেন।শুধু তাই নয়,তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ফিরে পান এবং আওয়ামী বিরোধী ‘গোলাপি’ দলে যোগ দেন।পরে জিয়াপন্থীরা ‘গোলাপি’ দল ভেঙে সাদা দল বানালে তিনি সাদা দলে যোগ দিয়ে ঐ দলের সমর্থনে সিন্ডিকেট নির্বাচনে অংশ নেন।অধ্যাপক নেহাল করিম ড. আনোয়ারকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন,যারা আপনার ভাইকে ফাঁসি দিলো, আপনি তাদের সঙ্গে যান কিভাবে? আনোয়ার জবাবে বলেছিলেন, ‘অনেক কথা আছে, পরে বলবো’।এরকম বহু উদাহরণ আছে যারা জিয়াউর রহমান কর্তৃক সুবিধাভোগী। আমার প্রশ্ন, আওয়ামীলীগ সরকার জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব কেড়ে নিলে জিয়াউর রহমান কর্তৃক সুবিধা ভোগীদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিবে।শুনেছি, অন্যায়কারী,আশ্রয়দাতা,সুবিধাভোগী সব এক গোয়ালের গবাদি।
বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যার জন্ম স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি, তবে এই দলের জন্ম তৎকালীন সময়ে অনিবার্য ছিল বলে আমি মনে করি। এই অঞ্চলে সব দলের জন্ম হয়েছে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে, রাজপথে অথবা আলোচনার টেবিলে। দলটি তৈরি হলো ক্ষমতার শীর্ষে থাকা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারা, যিনি সিদ্ধান্ত নিলেন রাজনীতি করবেন – এবং তিনি রাজনীতি করলেন। বাংলাদেশে বিভাজনের রাজনীতির বিয়োগান্ত শিকার হয়েছেন যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ,জিয়াউর রহমান তাদের একজন। তার সমালোচনা করা যাবে ঘন্টার পর ঘন্টা, লেখা যাবে পাতার পর পাতা।তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিলেও বঙ্গবন্ধুকে নেতা মানতেন এবং তার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলতেন। জেনারেল জিয়াউর রহমানের দূর্ভাগ্য তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়নি,হয়ত আমরা বীরের সম্মান দিতে জানিনা।কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বাংলাদেশের একজন মাএ মুক্তিযোদ্ধার ছবি আছে, বুকের ওপর দুই হাত আড়াআড়ি করে দাঁড়ানো- তিনি জিয়াউর রহমান।
এখন আপনারা বলতে পারেন কোন বীর যদি আদর্শ চ্যুত হয় তাহলে তাকে বীর বলা সমীচীন হবে কি?ফেরেস্তা কূলের নেতা আযাজিল সবচেয়ে বেশি ইবাদত করে ও আদর্শচ্যূতির কারণে তাকে শয়তান নাম ধারণ করতে হলো।আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, বাল্মিকীর ইতিহাস পড়ুন যিনি ডাকাত হতে সাধু হয়েছিলেন।নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার ঘটনাও অনুরূপ। শেষ ভালো যার সব ভালো তার।সবশেষ বিচারে কেন বলা যাবেনা, হাজারো সমালোচনা থাকলেও জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের অবদান মিথ্যা হয়ে যায়না। অনেকে আবার বলবেন, রাজাকার চিরদিন রাজাকার থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা চিরদিন মুক্তিযোদ্ধা থাকেনা। আমি বলবো রাজনীতিবিদ জিয়াউর রহমানের আমরা হাজারো সমালোচনা করবো, প্রয়োজনে তাকে বয়কট করবো কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে আমরা সম্মান না করে পারবোনা, কারণ আন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয়না।
লালন ফকিরের কয়েকটা গানের লাইন এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক।তাহলো – “পন্ডিত কানা অহংকারে,মাতাব্বর কানা চোগলখোরে…… নিজে কানা পথ চেনেনা,পরকে ডাকে বার বার।”আমরা দেশবাসী দীর্ঘদিন ধরে নানা কিসিমের কানার পাল্লায় পড়েছি। লালন প্রতীকী অর্থে একচোখা রাজনীতিবিদ (মাদবর) বুদ্ধিজীবি (পন্ডিত)প্রসঙ্গ টেনে গানটি বেঁধেছেন।আমাদের রাজনৈতিক সৌভাগ্যবানেরা গদিনশীল হওয়ার সাথে সাথেই যেমন খুশি তেমন সাজো খেলা খেলে।যে অপরাধে জিয়াউর রহমান দোষী সে একই অপরাধে বাকীরা নিরাপদ কেন থাকবে? এই দেশে আদর্শের ধারাবাহিকতা কতজন রাজনৈতিক ব্যাক্তির আছে বা ছিল সেটা মানুষ জানে, মানুষ নিরীহ হতে পারে তবে জাহেল নয়,মানুষ বোবা হতে পারে তবে অন্ধ নয়।আমাদের পরিএান পেতে হলে অদৃষ্টবাদীর মতো আবার লালনকেই স্বরণ করে বলতে হবে, “এসো দয়াল,পার করো ভবের ঘটে।”
(লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত)