মাসুদ কামাল
মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যা ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রদীপ, গুলি বর্ষণকারী ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরা গ্রেফতারও হয়েছেন। আদালত এদেরকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করছে, আগামীতে আরও কয়েকদিন করবে। হয়তো এর মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসবে।
প্রভাবশালী ও বেপরোয়া এই পুলিশদের গ্রেফতারের পর সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেক ভুক্তভোগীই এরই মধ্যে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পাচ্ছে। এদের কথা শুনলে, হয়তো বের হয়ে আসবে আরও অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য। হয়তো জানা যাবে- মাদকের বিরুদ্ধে খোদ সরকার প্রধানের জিরো টলারেন্স নীতির পরও কেন এবং কিভাবে মিয়ানমার থেকে অবাধে ঢুকতে পারতো ইয়াবা।
এসবই প্রত্যাশার কথা। কিন্তু আমার আজকের লেখার বিষয় প্রদীপ, লিয়াকত, কিংবা পুলিশের ক্রসফায়ার নয়। এসব নিয়ে অনেকেই লিখেছেন, লিখছেন। আমার উদ্বেগ সিফাত ও শিপ্রাকে নিয়ে। মেজর সিনহার সঙ্গে সেদিন গাড়িতে সাহেদুল ইসলাম সিফাত ছিলেন। সিফাত একজন চলচ্চিত্র কর্মী। এটা এখন সবাই জানেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা একটা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যই কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন আর এক চলচ্চিত্র কর্মী শিপ্রা দেবনাথ। ঘটনার সময় শিপ্রা ছিলেন কক্সবাজারে হোটেলে।
পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার আগেই, অন্য সব “বিচার বহির্ভূত হত্যা”র সময় যেমন হয়, পুলিশ হত্যা ও মাদকের দু’টি মামলা করে। একটি হত্যা মামলা, আর একটি মদকের মামলা। হত্যা মামলায় আসামী করা হয় সিফাতকে। বলা হয়, মেজর সিনহা যে নিহত হয়েছেন, তার গায়ে নাকি সিফাতের করা গুলি লেগেছে! আর এরপর কক্সবাজারে হোটেলে গিয়ে শিপ্রাকে গ্রেফতার করা হয়, তার কক্ষে নাকি মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে!
অনেকেই হয়তো বলবেন- এ দুটি তো সাজানো মামলা। বলবেন বটে, কিন্তু মামলায় কি ‘সাজানো’ কথাটি লেখা থাকবে? থাকবে না। তাই সিফাতকে হত্যা মামলাতেই লড়তে হবে। খুব সহজে তার জামিন কি হবে? দেশের মানুষ এরই মধ্যে জেনে গেছে- কিভাবে কি হয়েছে। তারা জানে- কাদের কারণে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মেজর সিনহার। সবাই সবকিছু জানে। কিন্তু এই যে এতকিছু জানা, তাতেও কি কিছুমাত্র লাভ হয়েছে সিফাত ও শিপ্রার? পুলিশের দায়ের করা সাজানো হত্যা ও মাদক মামলায় চলচ্চিত্রকর্মী সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ এখনো জেলে!
শেষ পর্যন্ত প্রদীপ, লিয়াকতদের বিচার কতদূর কি হবে- জানি না। তবে সিফাত ও শ্রিপার কপালে যে যথেষ্ট ভোগান্তি আছে, সেটা ধরেই নেওয়া যায়। বিনা অপরাধে যদি দুজন সংস্কৃতিকর্মীকে এভাবে জেলে থাকতে হয়, যদি আইনের শাসন তাদেরকে ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে না পারে, তাহলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাটি আর থাকবে কি করে?