আব্দুর রহমান
সাংবাদিক, গণমাধ্যম পরামর্শক ও গবেষক জাহিদ রহমান। কাল রাত থেকে খুলে বসেছিলেন তার ফুটবলের স্মৃতির ঝাঁপি। একের পর এক ছবি তিনি আপলোড করতে থাকেন তার ফেসবুক পেজে। প্রতিটি ছবি বাংলাদেশের ফুটবলের গৌরবের, আনন্দের, বেদনার। জাহিদ রহমান ছবিগুলোর সাথে লিখে দিয়েছেন ছবির প্রেক্ষাপটও।
বাংলাদেশের ফুটবলের কিংবদন্তী কাজী সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলাল, আনোয়ারের ফুটবল মাঠ থেকে কারাগারে যাওয়া, দেশের ফুটবলের আরও কয়েকজন তারকার কথাও উঠে আসে তার লেখায়। উঠে আসে সে সময় ঢাকার স্টেডিয়াম কাঁপানো ইরাকি ফুটবলার সামির শাকির, শ্রীলংকান পাকির আলী, ইরানের নাসের হেজাজীর ফুটবলীয় মেধা আর তাদের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কথা। তার এসব পোস্ট আলোড়ণ তোলে ক্রীড়া সাংবাদিকসহ ফুটবলামোদীদের মধ্যে। তারাও নানা স্মৃতি উল্লেখ করেন মন্তব্যে। অনেকে তাদের সংগ্রহে থাকা ছবিও দেন মন্তব্য হিসেবে। জাহিদ রহমানের ফুটবলীয় স্মৃতিরোমন্থনের কিছু চিত্র।

গোলরক্ষক মোতালেব ভাই এর ডানপাশে গোলাম রাববানি হেলাল ভাই। কদিন আগে চির বিদায় নিলেন তিনি। মোতালেব ভাইও বেঁচে নেই।
এই ছবিটি কপি করেছিলাম সাবেক ফুটবলার অলোক ভাই এর তেজকুনি পাড়ার বাসা থেকে।

পুলিশ চারজনকে নিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়। ইশরদী থেকে চুন্নু, সালাহউদ্দিনকে যশোরে নেওয়া হয় আর হেলাল আনোয়ারকে নেওয়া হয় রাজাশাহীতে।
মুক্ত হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিন ও চুন্নু যান রাজশাহীতে। এরপর গোলাম রব্বানি হেলাল ও আনোয়ারকে সাথে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন।

৮৪ সালে ইনেদানেশিয়ার বিপক্ষে আশরাফ আহমেদ চুন্নুর ব্যানানা শটে করা গোল আজও ইতিহাস। চুন্নু ভাই অনেকটা বন্ধু র মতো।
৯১ এর জাতীয় নির্বাচনে চুন্নু ভাই ও বাদল দা হেরে গেলে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর জাতীয় নির্বাচনে ক্রীড়াঙ্গনের কতো হগামগা এমপি হলো!!!! মন্ত্রী হলেন।


ইরানের কিংবদন্তি ফুটবলার নাসের হেজাজী। গোলরক্ষক ছিলেন। ঢাকা মোহামেডানে খেলেছেন। কোচও ছিলেন। ২০১১ সালে প্রয়াত হন।

ওয়াসিম ইকবাল। বল নিয়ে দাঁড়াস সাপের মতো ছুটতেন। ব্রাদার্স, আবাহনী মাতিয়েছেন। সিনেমায় নায়কও হয়েছিলেন একবার। কোচিং পেশায় এলেও টিকতে পারেননি।
ফুটবল থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নেননি অভিমান থেকে।

৮৭ তে আবাহনীতে খেলেতে এলেন ইরাকের তুখোড় সেন্টার ব্যাক শামির সাকির । এর আগে ৮৬ সালে ইরাকের জাতীয় দলে হয়ে মেক্সিকো বিশ্বকাপে খেলেন তনি । আবাহনীতে এসেই শামির সমর্থকদের মন জয় করে নিলেন । একসময় আবাহনীর কোচ হলেন।
৯৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন। ৯৯ সালের ৮ম দক্ষিণ এশিয়া গেমসে খেলতে যাওয়ার আগে সামির সাকির উঠলেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ-এ জাসদ অফিসের উপরে ইমপেরিয়াল হোটেলে। সে সময় সামির শাকিরের একটা এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ করলাম হোটেলে গিয়ে অন্যদিনের খেলা পত্রিকার জন্য।
চেইন স্মোকার হিসেবে খ্যাত ছিলেন তিনি । স্বভাবে ছিলেন ক্ষিপ্র এবং হাস্যজ্জ্বল। জুয়েল রানার অধিনায়কত্বে নেপালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলো ঠিকই, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ শামির সাকির আর বাংলাদেশে ফিরলেন না।
সামির শাকির সবসময় একটা কথা বলতেন-
এদেশের ফুটবলের উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতা ফুটবলাররা নন, কর্মকর্তারা। সেই ক্ষোভ থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলকে গুডবাই জানিয়েছিলেন তিনি।
আবাহনী সমর্থকদের কাছে এখনও শামির সাকির প্রিয় এক নাম।