তানবীর সিদ্দিকী, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও বিশ্লেষক
মরণঘাতী করোনা আঘাত হানার পর থেকেই অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও Social Distance বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। একই সাথে চলতে থাকে সরকারী ছুটি আর লকডাউনের সীমানা।
বলা হয়ে থাকে এদেশে বর্তমানে জনসংখ্যা ১৮ কেটির বেশী। বিশ্বের ৮ম জনবহুল দেশ। আয়তন ৫৬,১৯২ বর্গমাইল কিন্তু জনসংখ্যা ও ভূখন্ডের আয়তনের অনুপাতে বাংলাদেশের অবসান ৯২ তম। এছাড়া পশ্চিমা বা উন্নত দেশের বাড়ী ঘর, বৈদ্যুতিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা সম্পূর্ন আলাদা। সেসব দেশে মাসের পর মাস বাড়ীতে থাকা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের আর্থসামাজিক ব্যাবস্থা সম্পূর্ন ভিন্ন। শহর এলাকা বা এপার্টমেন্ট এর বাইরে মানুষ বাস করে গাদাগাদি করে। ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি, নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসস্থল বা তাদের চলাচলের স্থানগুলো ঘিন্চি ও ঘনবসতিপূর্ন। এমন একটা জনবহুল দেশে যখন বলা হয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে তখন সেটা কতটুকু মেনে চলা সম্ভব সেটা সহজেই অনুমেয়। শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে আমাদের নাগরিকরা তুলনামূলকভাবে কম সচেতন। সরকারী বিধিনিষেধ বা আইন মেনে চলার প্রবনতাও খুবই কম। এমতাবস্থায় এদেশে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কার্যত প্রায় অসম্ভব। এ বিষয়ে অসংখ্য রিপোর্ট আর ছবি আমরা প্রতিদিনই দেখছি।
এদিকে গত ৪ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিংমল আজ ১০ মে থেকে খোলার যে কথা ঘোষণা করে সরকার তা পুরোপুরি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা প্রায় অসম্ভব। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, শপিংমল বা মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে।
আবার ক্রেতাদের নিজ এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত শপিংমলে কেনাকাটা করার নির্দেশনাসহ ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে আরো বলা হয়েছে প্রত্যেক ক্রেতাকে নিজ পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স) সঙ্গে রাখতে হবে। ডিএমপির নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি শপিংমলের প্রবেশমুখে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক টানেল বা চেম্বার স্থাপন করতে হবে এবং তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি দোকানে পৃথকভাবে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কার্যত তাই ১৪টি শর্ত মেনে দোকান বা শপিংমল খোলাও প্রায় অসম্ভব। আশার কথা মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বসুন্ধরা, যমুনা, গাউছিয়া, নিউমার্কেটসহ ঢাকার অধিকাংশ শপিংমল ঈদের আগে খুলছে না। আজ যেসব দোকান ও মল খুলেছিল তার মধ্যে কয়েকটা দোকান পুলিশ বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্যবিধি না মানায়।
আমি প্রায়ই বলি জাতি হিসেবে আমরা অনন্য! আমরা এমন কিছু করি যা অন্য কোন জাতি করে না। গত ১৬ এপ্রিল সারাদেশকে ঝাঁকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়। সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে এমন কোন খবর এখনো শুনিনি। যেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়ানোর পর অন্যান্য দেশ পুরোপুরি লকডাউনে চলে গেল, তখন আমরা গার্মেন্টসসহ অনেককিছু খুলে দিলাম! করোনাকে ঠেকানোর জন্য এখনো কোন ওষুধ বাজারে আসেনি। এমতাবস্থায় ব্যাক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা আর ঘরে থাকাই হবে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। এক বছর ঈদের সওদা না করলে কি হয়!