ভয়েস বাংলা ডেস্ক
আজ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কিনে আনা তিন কোটি ডোজের দ্বিতীয় চালান এটি।
হাতে থাকা টিকার পুরোটাই প্রথম ডোজে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলছেন, টিকার যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত রয়েছে।
তাই প্রথম দফায় ৩৫ লাখ টিকা দেবার যে চিন্তা ছিল তা পরিবর্তন করে এখন সংরক্ষণে থাকা পুরোটাই প্রথম ডোজ হিসেবে দেবার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, “টিকার চালান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তবে টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে কিনা – সেই আশঙ্কাতেও দ্রুত হাতে থাকা সব ডোজ সরকার শেষ করতে চায়, মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
এপ্রিল মাস থেকে দ্বিতীয় ডোজ
এপ্রিল মাস থেকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শুরু হবে বলে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
আর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শেষ হওয়ার আগেই একই সাথে আরও নতুন নিবন্ধনকারীকে প্রথম ডোজ দেয়া শুরু করতে চায় সরকার।
শীঘ্রই প্রথম সারির কর্মী হিসেবে শিক্ষকদের টিকা দেয়া শুরু করার ঘোষণা এসেছে।
অন্যদিকে সংরক্ষণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ টিকার চালান একটু বিরতি দিয়ে আসার পক্ষপাতী বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আগামী কয়েক মাসে যত ডোজ আসার সম্ভাবনা
গত ২৫ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের উৎপাদিত ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
তবে এর আগেই ভারত সরকারের উপহার দেয়া ২০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসেছিল।
২৭ জানুয়ারি কোভিশিল্ড টিকা প্রথম দেয়া হয় পর্যবেক্ষণের জন্য। আর এ মাসের ৭ তারিখ থেকে দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচী শুরু হয়।
এর পর থেকে গড়ে প্রতিদিন দুই লাখ ডোজের মত টিকা দেয়া হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে ৩৫ লাখের বেশি।
বাংলাদেশে শুরুর দিকে টিকার ব্যাপারে মানুষজনের অনাগ্রহ থাকলেও এখন আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে।
বাংলাদেশ কি পর্যাপ্ত টিকা পাবে?
তবে মাত্র গতকালই সিরাম ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে টিকার জন্য অপেক্ষমান বিশ্ববাসীকে ধৈর্য ধরার আহবান জানানো হয়েছে, কেননা আগে ভারতের আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করা হবে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সময়মত পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ করতে কতটা সক্ষম হবে?
প্রথম ডোজ দেবার পর দ্বিতীয় ডোজের জন্য যথেষ্ট টিকা হাতে থাকবে কিনা – এমন প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করেছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ধারণা দিয়েছেন কী পরিমাণে টিকা আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে।
“সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনা টিকা সহ আমাদের পাইপলাইনে দশ কোটির যা পাঁচ কোটি মানুষকে দুই ডোজে দেয়া হবে” – বলছেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বণ্টনের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে তৈরি হয়েছে কোভ্যাক্স।
তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশের জন্য টিকা তারা সরবরাহ করবে।
মি.আলমগীর বলছেন, “ছয় কোটি আশি লাখ টিকা বাংলাদেশকে দেবে কোভ্যাক্স।”
এর প্রথম চালান এ মাসের শেষে আসতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘বাংলাদেশের টিকা কর্মসূচী অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাহফুজা রিফাত মনে করছেন, বাংলাদেশ টিকা দেবার ক্ষেত্রে অনেক দেশের থেকে এগিয়ে থাকলেও বারবার সংখ্যা ও পরিকল্পনা পরিবর্তন না হলে ভাল হত।
তিনি বলছেন, “বিশ্বব্যাপী টিকার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবকিছু অতিক্রম করেও যেভাবে আমাদের টিকা কর্মসূচী চলছে, আমি বলবো সেটা আশানুরূপ। কিন্তু এখনো পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবে বলে বলা হচ্ছে তা বাংলাদেশে জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়।”
“তাই সামনে আমাদের এই সেবার মান ও গতি ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যাতে কোন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমরা না যাই।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা