মাহবুবুর রহমান, ডেনমার্ক
আওয়ামী লীগ। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টার উদ্দেশ্য,২২টি রাজনৈতিক দল,তিনটি জোটের মাধ্যমে যৌথ আন্দোলনে নেমেছিল।
দিনটি ছিল ১০ ই নভেম্বর ১৯৮৭ সাল,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা,ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি। স্বৈরাচারী এরশাদ সেইদিন সারাদেশ ব্যাপি কার্ফু জারি করেছিলেন। কার্ফু ভেংগে মিছিলের আগে-পিছে ঢাকা সচিবালয়ের কাছে, একটি জীবন্ত পোষ্টার আমরা দেখেছিলাম ।যা পৃথিবীর সব পোষ্টার-ব্যনারকে হার মানিয়ে ছিল। সেই পোষ্টটি একটি জীবন্ত মানুষ শহীদ নূর হোসেন,যে আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছেন ।প্রশ্ন হলো কি ছিল সেই পোষ্টারে,সেই পোষ্টটি নুর হোসেন নিজেই,যার বুকে-পিঠে সাদা কালিতে লেখা ছিল “ স্বৈরাচার নিপাত যাক,গণতন্ত্র মুক্তি পাক”।
শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের ধারাবাহিক অন্দোলনের মধ্যে দিয়ে,স্বৈরচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছিল। স্বৈরচার সরকারের পতনের পরের দিন,আমি কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছিলাম ।মতৃভূমি বাংলাদেশের মর্ষাদা,আমরা নিজেদের রক্তের বিনিময়ে হলেও রক্ষা করবো,এবং যাতে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফসল বাংলার মানুষ ভোগ করতে পারে,তাঁর জন্য আগামী দিনের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্রত থাকবো। কিছুদিন পর সকল দলের ঐক্যবন্ধ আন্তরিকতায়, তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নিবার্চনের মাধ্যমে গনতন্ত্রের যাত্রা শুধু হয়েছিল,সাথে বাংলাদেশ থেকে সামরিক শাসিত সরকারের অবসান ঘটেছিল বটে। কিন্তু আস্তে আস্তে সমায়ের সাথে সাথে স্বৈরতন্ত্র নিপাতের বর্জ্বকন্ঠ থেকে ধ্বনি ক্রমেই কমজোরি হয়েছে। অন্যদিকে শক্তশালী হয়েছে দেশের আমলারা ও সরকারী কর্মচারীরা। যারা সব সময় সরকার পক্ষের লোক, ময়ূরপঙ্খীর মতো ভাব ধারণ করে,মেঘ দেখলেই পেখম তুলে নাচে।
এই বাংলাদেশে নূর হোসেনের মতো এ রকম শহীদ তরুণের অভাব কোনদিন হয়নি। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় রাজনীতির মাঠে, গর্ব করে বলেছিলাম, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবোনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাস্পাসে বা রাজপথের দেওয়ালে রাত জেগে কত না চিকা লিখেছি “অমুকের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না”। কিন্তু দিনের শেষে সন্ধ্যায় কিৎবা সকালে আশার সমাধিসৌধে দাঁড়িয়ে ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে হয় । নুর হোসেন তোমার আত্মদান আমরা বৃথা করে দিয়েছি। তোমাকে দেওয়া কথা আমরা রাখতে পারিনি। কারন তোমার আত্বত্যাগের পরেও
– গণআন্দোলন প্রতিহত করতে আমাদের দেশের শাসকরা পাকিস্তানী কায়দায় বাংলার মাটিতে স্হাপন করেছিল চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাক্যাম্প।
-কেন স্বাধীন দেশের স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে ৯ বছর লাগে, যেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহীনির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই হয়েছিল ৯মাস?
– যে বঙ্গবন্ধুকে পকিস্তানি হানাদার বাহীনি তাঁদের বন্ধিদশা থেকেও হত্যা করতে সাহস করেনি কিন্তু আমরা এমনই জাতি আমরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছি। এই লজ্জা কোথায় রাখি?
-স্বৈরাচারী এরশাদের শাসন আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদের কেন বিচার হলো না?পক্ষ্যন্তরে এরশাদকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে,রাজনীতি ও ক্ষমতার হিসাব নিকাষে,রাজনীতিতে পূর্ণবাসন করা হয়ে ছিল এরশাদ ও তাঁর দলকে।
-সকল গণআন্দোলন ও দাবী আদায়ে নুর হোসেনরা আত্বহতি দিয়ে সফলতা এনে দেয় এবং বেওয়ারিশ লাশ হয়ে রাতের আধাঁরে জুরাইন কবরস্থানে মাটি চাপা দেওয়া হয় ,আর তাঁর ফসল ভোগ করে দেশের আমলারা অন্যদিকে উপক্ষিত হয় রাজনৈতিক কর্মীরা।